শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:২৮ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

দৃশ্যদূষণ

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা

এ সময়ের বড় আলোচনা মেট্রোরেল। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হওয়া পরিবহন খাতে যুক্ত এই আধুনিক সংযোজন নিয়ে মানুষের উচ্ছ্বাস আছে। অনেক বিধি-নিষেধ আছে কী করা যাবে আর কী যাবে না। গত ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন মূল্যবান জাতীয় সম্পদ রক্ষায় সবাইকে যত্নবান হতে তাগিদ দিয়েছিলেন। কিন্তু মেট্রোরেল চালুর ৪৮ ঘণ্টা পার না হতেই দেখা গেলো ভয়ংকর চিত্র। মূলধারার গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেলো অনেক লোক বন্ধ থাকা মূল ফটক ডিঙিয়ে ঢুকে পড়ছে মেট্রোরেলের প্ল্যাটফর্মে।

সচেতন ও সংবেদনশীল মানুষকে হতাশ করেছে কিছু মানুষের এই আচরণ। কিন্তু এটুকু শুধু নয়। শুরু হয়েছে আরও কাণ্ড। অনেকে আসনের ওপর নিজের নাম, প্রেমিকার নামও লেখা শুরু করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় মেট্রোরেলের পিলারগুলোতে পোস্টার পড়তেও শুরু করেছে। এদিক থেকে বরাবরের মতোই এগিয়ে আছে জাতীয় পার্টির নেতা হাজী সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন, যিনি ‘পোস্টার মিলন’ নামে ব্যাপক পরিচিত। শহরের এমন কোনও স্থাপনা নেই যেটায় তার পোস্টার পাওয়া যাবে না।

প্রধান সড়কের আশপাশসহ শহরের অলিগলিতেও যত্রতত্র পোস্টার, ব্যানার লাগানো, বিলবোর্ড স্থাপন ও দেয়াল লিখনের কারণে ঘটছে সৌন্দর্যহানি। সড়কের পাশের দেয়াল, ভবন, গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসার দেয়াল কিছুই বাদ যায়নি। রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গসংগঠন, বিভিন্ন সমিতি, ব্যবসায়ী, ব্যক্তি ও গোষ্ঠী যে যেভাবে পারছে নগরীকে একটি ব্যানার, বিলবোর্ড, হোর্ডিং, পোস্টার আর দেয়াল লিখনের মাধ্যমে নোংরা করছে।

এসব পোস্টার, বিলবোর্ড ব্যানারে নগরীর সৌন্দর্যহানি ঘটছে শুধু নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সম্পদ, মানুষের জন্য সৃষ্টি করছে দৃশ্যদূষণ। ‘দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১২’ গেজেট আকারে প্রকাশ হওয়ার ১০ বছর পরেও তা অকার্যকর। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড উচ্ছেদ করেছিলেন। এসবের মধ্যে অনেক বড় রাষ্ট্রীয় সংস্থা, ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যানার, বিলবোর্ডও ছিল। শহরটি সুন্দর হয়ে উঠেছিল। তাঁর অকাল প্রয়াণে শহরটি আবার পরিণত হয়েছে এসবের জঞ্জালে। বর্তমান মেয়রদ্বয়ের কোনও উদ্যোগ নেই এসব নিয়ন্ত্রণ ও অপসারণে।

সবচেয়ে বেশি দৃশ্যদূষণ করেন রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিরা। ফলে সাধারণ মানুষও কোনও কিছু মানতে চায় না। তারা আরও বেশি উৎসাহিত হয় নগরীর সৌন্দর্য নষ্ট করতে। একটা সময় ছিল ভোটের সময় দেয়াল লিখন ও পোস্টার সাঁটা হতো। এখন সারা বছরই বড় নেতা, মেঝো নেতা, এমনকি পাতি নেতারাও শহরের আনাচে-কানাচে পোস্টার, বিলবোর্ড আর দেয়াল লিখনে ভরে ফেলছে পুরো শহর। আর আছে নানা অশ্লীল বিজ্ঞাপন। এতে ব্যাপকভাবে দৃশ্যদূষণ হচ্ছে যা সাধারণ মানুষকে নিয়ত বিরক্ত করছে। পরিবেশ ও নগরীর সৌন্দর্য দুটোই বিনষ্ট হচ্ছে এ কারণে।

বলতে গেলে পুরো রাজধানী মুখ ঢেকেছে এসব হোর্ডিংয়ে, দেয়াল লিখনে, পোস্টারে, বিলবোর্ডে। তবে দৃশ্যদূষণের এই ছবি নতুন নয়, দীর্ঘদিনের। দিন দিন তা কেবল বাড়ছে। শহরে জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৃশ্যদূষণও বাড়ছে। সিটি করপোরেশন সৌন্দর্যায়ন এবং সবুজায়নের বহু চেষ্টা করে, প্রকল্প নেয়। কিন্তু পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড, হোর্ডিং আর দেয়াল লিখনে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। এসব হচ্ছে নিয়মবহির্ভূতভাবেই। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ হয় কিছু করতে পারছে না, অথবা নজরদারির কোনও ইচ্ছাই তার নেই। এটি এক বড় ‘অসুখ’।

২০২০ সালে এসব সরাতে অভিযানে নেমেছিল উত্তর সিটি করপোরেশন। মেয়র আতিকুল ইসলাম তখন বলেছিলেন বলেন, ‘আজকে বড় বড় ডেভেলপাররা কীভাবে তাদের সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিলো, সিটি করপোরেশনকে কোনও ধরনের ট্যাক্স না দিয়ে। এই শহরে আপনাদের এত বড় বড় ব্র্যান্ডিং করবেন, আপনি ব্যবসা করবেন, আর সিটি করপোরেশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোনও ট্যাক্স দেবেন না, এটি হতে পারে না। আমি সবাইকে বলতে চাই শহরে কোনও ধরনের সাইনবোর্ড লাগাতে গেলে, আগে দেখুন সিটি করপোরেশনের নিয়ম কী? বিদেশে তো আপনারা এরকম করতে পারবেন না। এদেশে কেন করবেন’?

এটুকুই। এরপর আর কোনও কিছুই কমেনি। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কর নিতে চেয়েছেন মেয়র। কিন্তু তিনি নীরব আছেন শাসক দলের প্রচারণায়। শহরের এমন একটি স্থান পাওয়া যাবে না যেখানে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সংগঠনের পোস্টার, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ড নেই। যানজট, ময়লা আবর্জনায় নাকাল নগরবাসী ও যারা বাইরে থেকে আসেন তাদের জন্য দৃশ্যদূষণ আরেক যন্ত্রণা।

যে রাজনৈতিক দল বা নেতা, যে ব্যবসায়ী, যে সমিতির কর্তারা এসব বলছেন তারা দেশ-বিদেশে যান। তারা কী এসব দেখেন? অনেক কারণের মধ্যে দৃশ্যদূষণও পরিবেশকে নষ্ট করছে, দূষণ করছেন। দৃশ্যদূষণ সুস্থ মনন গঠনের বড় প্রতিবন্ধক। এই অসুখ এখন রাজধানীর বাইরে হাইওয়ে এবং ছোট শহরের ছড়িয়ে পড়েছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় তাদের অনুমতি ছাড়াই বেশিরভাগ বিলবোর্ড, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড লাগানো হয়। দেয়াল লিখন ও পোস্টার নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতেই হবে। দৃশ্যদূষণ প্রতিরোধ করা নাগরিক দাবি।

লেখক: সাংবাদিক

ভয়েস/জেইউ।

 

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION